পাবনায় আনন্দ টিভির সাংবাদিক সুবর্ণা নদীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার সুবর্ণা নদী (৩২) নামে এক নারী সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সুবর্ণা নদী অনলাইন পোর্টাল জাগ্রত বাংলার সম্পাদক ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

নিহত সুবর্ণা নদীর স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, সুবর্ণা নদী ওই এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। মঙ্গলবার কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় কলিংবেল টিপে ৩ থেকে ৪ জনের একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে করে এসে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে দশটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবর্ণাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সুবর্ণার বড় বোন চম্পা খাতুন জানান, এক ব্যক্তিকে স্বামী দাবি করে সুবর্ণা নদী মামলা করেছিলেন। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। এই মামলার কারণেই সুবর্ণাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব বিরোধের জের ধরে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ঘটনা তদন্ত ও হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

স্বামী রাজীব হোসেন ও শ্বশুর আবুল হোসেনের হাত থেকে বাঁচতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন পাবনায় খুন হওয়া নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদী। এনিয়ে পাবনা ও ঢাকায় একাধিক সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সুবর্ণা। ২০১৭ সালের ২২ জুলাই পাবনা সংবাদপত্র পরিষদে এক সংবাদ সম্মেলন করে সুবর্ণা বলেছিলেন, ‘শিল্পপতি স্বামী রাজীব হোসেন ও শ্বশুর আবুল হোসেন কর্তৃক ভাড়াটিয়া গুন্ডাবাহিনী দিয়ে আমাকে নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সে সময় সুবর্ণা আরো বলেন, ‘২০১৬ সালে ৬ জুন মাসের পাবনার শহরের রাজীব হোসেনের সাথে ৫ লাখ ১ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকে আমি তার সঙ্গে সংসার করতে থাকি। একপর্যায়ে আমার কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমি যৌতুকের টাকা দিতে অপারকতা প্রকাশ করায় আমাকে প্রচন্ডভাবে মারপিট করে। এরপর থেকে যত দিন যায় ধীরে ধীরে তাদের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ৩১ মে আমার স্বামী আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে বাবার বাড়ি গিয়ে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। এরপর ৪ জুন পাবনা সদর থানায় নারী-শিশু ও যৌতুক আইনে মামলা করি (মামলা নং-০৮)। এছাড়া পাবনা জজ কোর্টে যৌতুক মামলা করি।’

২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একই অভিযোগ করে সুবর্ণা বলেন, ‘মামলা করার পর আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী প্রচন্ডভাবে আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে সব মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ ও হুমকি প্রদর্শন করতে থাকেন। মামলা তুলে না নিলে আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। পরে রাস্তায় ভাড়াটিয়া গুন্ডা দিয়ে গলায় চাকু ধরে মামলা তুলে নেয়ার জন্য শাসিয়ে যায়। এ অবস্থায় আমি ভয়ে পাবনা ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
তিনি বলেন, এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্থক্ষেপ কামনা করছি। একই সঙ্গে আসামিদের গ্রেফতারসহ উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এ মামলার কারণেই সুবর্ণাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বড় বোন চম্পা খাতুন। চম্পা বলেন, ‘মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি।’
উল্লেখ, মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাতে পাবনা পৌর সদরের রাঁধানগর মহল্লায় আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের সামনে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে বাসার সামনেই কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুবর্ণা আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি, অনলাইন পোর্টাল দৈনিক জাগ্রত বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। পাশাপাশি পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজ করতেন। সুবর্ণার আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারের জান্নাত নামে ৬ বছরের কন্যা সন্তান ও মাকে নিয়ে শহরের রাঁধানগর মহল্লায় আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের সামনে বাসা ভাড়া থাকতেন।

নকশী টিভি'র সকল অনুষ্ঠান সরাসরি দেখতে ক্লিক করুনঃ সরাসরি সম্প্রচার

ইউটিউবে নকশী টিভির জনপ্রিয় সব নাটক দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন নকশী টিভির ইউটিউব চ্যানেল

সর্বশেষ সংবাদ